Sunday, June 10, 2018

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ৮ ও ৯নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা এখলাছ উদ্দীন এবং জেষ্ঠ সন্তানের রক্তে রন্জিত হবে নবগঙ্গা...!


আজএগারোই জুন, বাবা ও বড় ভাইয়ের ৩৪তম মৃত্যু বার্ষিকী। Image may contain: 1 person, textএখন রাত বারোটা, এ রাতে আমার ঘুম আসেনা। কিছুক্ষণ পরেই ঘটে যাবে আমার ও আমাদের পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক মর্মান্তিক দুঃর্ঘটনাটি। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ৮ ও ৯নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা এখলাছ উদ্দীন এবং জেষ্ঠ সন্তানের রক্তে রন্জিত হবে নবগঙ্গা...! যে শহীদদের চোখে দেখিনি শুধু মহান ত্যাগের গল্প কাহিনী পড়ে জানতে পেরেছি, তাদের প্রতি আমার ঠিক ৭৫ এর ১৫ই আগষ্টে ঘটে যাওয়া এবং ৩ রা নভে বদ্ধ জেলের প্রকোষ্ঠে নিহত জাতীয় ৪ নেতার প্রতি নিবিষ্ট সকল শ্রদ্ধা ও ভক্ত এবং সমবেদনা সমমানের। এক এক সময় ভাবী বোধ হয় ওরকম মৃত্যুর মাঝে এক অনন্ত আত্ম তৃপ্তি ছিল। এ নষ্ট ভ্রষ্ট নিকৃষ্ট হীন মন মানসিকতায় ভরিপুর সমাজ ও রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠার জন্য শহীদরা তাদের সোনালী দিনের সূর্যকে ডুবিয়ে দেয়নি। এ অনিয়মতান্ত্রিক অব্যবস্থা দুর্নীতি স্বজনপ্রীতির জন্য আমরা যুদ্ধে যাইনি। আর জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু, জাতীয় ৪ নেতা এবং এখলাস উদ্দিন স্যারদের সারা জীবন জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করার মূল লক্ষকে সারাদিন মূখে জয় বাংলা বলে গগন ফাটালেও বক্ষে ধারন করিনি। আমরা আসলেই জাতীয় জননেতা মহান স্বাধীনতার সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ ৪০ হাজার মা বোনের সাথেই বেঈমানী করছি কিন্তু মূখে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার মিথ্যে আস্ফালন করছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মান করছি না বরং তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ঠিক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনার নামে সব ভন্ডামী ও প্রতারনা করছি। স্বয়ং আওয়ামী লীগের ভিতরেই এখন সে ৭১ এর পাক হায়েনার বীজ এবং খন্দকার মোস্তাকের প্রেতাত্ত্বা ঘাপটি মেরে বসে আছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না। না পারছি নৌকা আওয়ামী লীগ ছাড়তে না পারছি একান্তভাবে কষে ধরতে। আমরা কোথায় যাবো? 

*****************
এখলাছ উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছিলেন, পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এবং সে যুদ্ধে জয়ী হয়ে বীরের বেশে দেশে ফিরে এসেছিলেন। সর্বশক্তি দিয়ে আত্মনিয়োগ করেছিলেন দেশকে সোনার বাংলায় পরিনত করার জন্য। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি। কিন্তু ততোদিনে বাংলার আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেছে। বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের অতন্দ্র প্রহরীরা দেখেছিলেন সে ঘন কালো মেঘ, কিন্তু তার ভয়াবহতা, বিভৎষ্যতা অনুধাবন করতে পারেননি । আমলে নেননি সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশে প্রতিবিপ্লবী শক্তির উত্থান। এই উদারতা বা ভুলের জন্য বঙ্গবন্ধু শুধু নিজের রক্ত দিয়ে নয়, পুরা পরিবারের এবং সারা জীবনের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচরদের রক্ত দিয়ে সে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন।
Image may contain: 1 person
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পরবর্তী বাবা আরো দশটি বছর বঙ্গবন্ধুর সেই দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ধারণ করে বেচে ছিলেন। কিন্তু তার সে জীবনটা ছিলো কঠিন এক সংগ্রামী জীবন এবং তিনি সংগ্রাম করেছিলেন সেই স্বাধীনতা বিরোধী পরাজিত প্রতিবিপ্লবী অপশক্তির বিরুদ্ধে। আপোষ করেননি, তবে করতে পারতেন। আপোষ করলে এখলাছ উদ্দীনকে হয়তো এভাবে স্বপুত্র মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করতে হতোনা, বেচে থাকতেন এবং নিজ পুত্রের লাশ কোলে নিয়ে মৃত্যুর জন্য নবগঙ্গার বালু তীরে অপেক্ষা করতে হতোনা।
না, এখলাছ উদ্দিন রাজনীতি ছাড়েননি এবং আপোষ বা মোস্তাকের আবরণও পরেননি। টিমটিম করে জ্বলা রাজনীতির সে মশালটি তিনি বহন করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি স্বৈরাচারী সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে তৎকালীন পনেরো দলের প্রায় প্রতিটি জনসভায় তিনি বঙ্গবন্ধুর সেই দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বর্ননা করতেন। মানুষও মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতেন তার সেই বক্তব্য এবং জানার ও বুঝার চেষ্টা করতেন সেই অজানা আদর্শকে। অথচ এখলাছ উদ্দীন বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাকশালের দায়িত্বশীল কোনও পদে ছিলেন না, তিনি ছিলেন পদাধিকার বলে(সংসদ সদস্য) বাকশালের একজন সাধারণ সদস্য। বঙ্গবন্ধু জানতেন দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি, তৎকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কতটা বিপদজনক। আমলে নেননি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পর এখলাছ উদ্দীনও জানতেন সে বিপদের কথা। কিন্তু তিনিও আমলে নেননি। বঙ্গবন্ধুর সে রাজনীতির মশালটি নিয়ে সামনে এগিয়েছেন। তিনি জানতেন স্বাধীনতা বিরোধী পরাজিত প্রতিবিপ্লবী শক্তি তাকে হত্যা করবে। পিছু হটেননি, জ্বালিয়ে রেখেছিলেন টিমটিম করে জ্বলা রাজনীতির সে মশালটি।
আওয়ামী রাজনীতির সে মশালটি বার বার জ্বলে উঠেছে। একানব্বই সালে
ষড়যন্ত্রকারী প্রতিবিপ্লবী শক্তি আবারও আওয়ামী রাজনীতিকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ছিয়ানব্বই সালে রাজনীতির সে মশালটি দাবানলের মতো ষড়যন্ত্রকারীদের ধংস করে দেয়। ফিরে আসে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, এবং প্রাণ ফিরে পায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। শুরু হয় বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার প্রক্রিয়া এবং সেটা ছিলো এক অসাধ্য সাধন। বিচারহীন সমাজকে আইনের আওতায় আনা কঠিন বাস্তবতা। আবারও ফিরে আসে পঁচাত্তর দুইহাজার এক সালে এবং শুরু হয় আওয়ামী লীগকে ও তার রাজনীতিকে ধংস করার প্রক্রিয়া। কিন্তু ততোদিনে আওয়ামী লীগের শরীরের তৈরী হয়ে গেছে এন্টিবডি। তাকে ধংস করা যায়নি। আওয়ামী রাজনীতির সে মশালটি দাওদাও করে আবারও জ্বলে উঠে। সে আগুনে স্বাধীনতা বিরোধী প্রতিবিপ্লবী রাজাকারদের ঝুলতে হয় ফাসীর কাষ্ঠে, আর এখন ধংসের দ্বারপ্রান্তে।


তবে ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। বর্তমান রাজনীতি বুঝতে হলে আমাদেরকে ফিরে তাকাতে হবে স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের তথা আআওয়ামী রাজনীতির দিকে। আওয়ামী লীগের আদর্শবাদী রাজনীতি তখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে । ক্যান্সার জীবাণু শরীরের সুস্থ কোষগুলিকে নিজেই খেয়ে ফেলে এবং আওয়ামী লীগের দেহের তখন নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ক্যান্সার জীবাণু, বাংলার আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেছে, চারিদিকে দূর্যোগের ঘনঘটা। তার ভয়াবহ পরিনতি পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট এবং প্রতিবিপ্লবী স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির ক্ষমতায় ফিরে আসা।
আওয়ামী লীগের নেতাদের আহ্বান জানানোর ধৃষ্টতা আমার নেই, নিধিরাম সর্দারের মতো অনুরোধ করছি প্লিজ আপনারা রাজনীতি করুণ। রাজনীতি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে নিজের শরীর তারা নিজেরা খেয়ে ফেলে। তবে এটা স্বাধীনতা পরবর্তী বা পঁচাত্তর পরবর্তী সময় নয় এবং এটা দুই হাজার আঠারো সাল। বিশাল ব্যবধান। যুগটি ডিজিটাল। রাজনীতিকে ক্যান্সার জীবাণু থেকে মুক্ত করা খুব সহজ, প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার। বিজ্ঞান -প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষেধক প্রয়োগ করুণ এবং ধারণ করুন নুতন দর্শন, নুতন চেতনা যার থাকবে একটা সৌন্দর্য। যুগে যুগে আওয়ামী রাজনীতি সেটা ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগ তার জন্মলগ্ন থেকেই নুতন দর্শন, নুতন চেতনা নিয়ে জনগণের সামনে এসেছে, জনগণ তাকে বিমুখ করেনি এবং ভবিষ্যতেও বিমুখ করবেনা।
ভোর হতে আর বেশি দেরি নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে বাবা বড় ভাইকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়বেন...আপনজনেরা তখনও ঘুমিয়ে আছে, আর নবগঙ্গার বালুর চরে রক্তাক্ত সন্তানের লাশ বুকে নিয়ে শুয়ে আছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বীর মুক্তযোদ্ধা আমার বাবা... আমরা শোকাহত .... তুমি রবে নিরবে হ্নদয়ে মমো !!!

No comments:

Post a Comment